মানিকগঞ্জে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নার্সারি গড়ে তুলেছে মানিকগঞ্জ ডিজেবল পিপল’স অর্গানাইজেশন টু ডেভেলপমেন্ট (এমডিপিওডি)। বেসরকারি এই সংস্থাটি সদর উপজেলার বেউথা এবং ল’ কলেজ সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের নার্সারি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই দুই নার্সারি থেকে আয়কৃত টাকা ব্যয় করা হয় প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই দুই নার্সারিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ, ঔষধি, ফুলের প্রায় ৮০-৯০ হাজার গাছের সমারোহে পরিপূর্ণ।
এমডিপিওডি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জ সদরের ল’ কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ২০০৭ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠে এই নার্সারিটি। অন্যদিকে, বেউথা এলাকায় যে নার্সারিটি রয়েছে সেটা মূলত চারা উৎপাদনের সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দুটি নার্সারির জায়গা ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে জায়গার মালিককে সাত হাজার টাকা করে দিতে হয়।
নার্সারির ম্যানেজার আক্তার আলী জানান, মানিকগঞ্জের মধ্যে সব থেকে বড় নার্সারি এটি। এই নার্সারিতে প্রায় ৪০০ প্রজাতির ফুল, ফল, ঔষধি, ভেষজ, বনসাই ও কাঠ গাছের চারা আছে। এখানে পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামেরও গাছ আছে। এখানে মোট সাতজন কর্মচারী কাজ করেন। মাসে গড়ে প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার গাছের চারা বিক্রি হয়। নার্সারির ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও গাছের চারা উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে যা লাভ হয় তা সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।
নার্সারির শ্রমিক কাজী আব্দুল আজীজ বলেন, আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমার একটা পা নেই। আমি কোনো ভারী কাজ করতে পারি না বলে ইন্তাজ স্যার নার্সারি দেখাশোনার কাজ দিয়েছেন। প্রতিমাসে আমাকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। এই নার্সারিতে কাজ করেই আমার সংসার চলে। আমার মতো আরো তিনজন এখানে কাজ করে।
নার্সারি থেকে গাছের চারা কিনে ভ্যানে নিয়ে বিক্রি করে বেড়ান মোহাম্মদ আলী আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে আমি এ পেশায় আছি। আমি ভ্যানে করে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ফল, ফুল ও কাঠ গাছের চারা বিক্রি করে থাকি। এতে প্রতিদিন আমার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। শীতকালে ফুলসহ বিভিন্ন গাছে চারা বিক্রি বেশি হয়। তখন প্রতিদিন লাভও বেশি হয়।
গাছ কিনতে আসা মেহের নিগার সুলতানা, সানজিদা রহমান, মারিয়া তাবাসছুম, রাশেদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এই নার্সারিতে প্রায় দেশি-বিদেশি নানা ধরনের গাছ পাওয়া যায়। ফলে গাছ কিনতে অন্য কোথাও যেতে হয় না। ছোট, বড় বাগান থেকে শুরু করে ছাদ বাগান বা বেলকোনিতে ঝুলানোর জন্যও গাছ পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছের দামও নাগালের মধ্যেই।
এমডিপিওডি’র পরিচালক ইন্তাজ আলী জানান, মানিকগঞ্জ ডিজেবল পিপল’স অর্গানাইজেশন টু ডেভেলপমেন্ট (এমডিপিওডি) ২০০৩ সালে জেলা সমাজসেবার নিবন্ধন পায়। এটি একটি বেসরকারি প্রতিবন্ধী সংগঠন। আমাদের সংগঠনে প্রায় ১৭শ প্রতিবন্ধী রয়েছে। বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে এখন আর সংগঠন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রতিবন্ধীদের সংগঠনটির কার্যক্রমকে টেকসই করার জন্য এই নার্সারি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, তারাও কোনো না কোনোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। তাদের প্রয়োজন শুধু মানবিকতা আর কাজ শেখার সুযোগ। সবাই যদি যার যার অবস্থান থেকে এদেরকে একটু সহায়তা করে তাহলে তারাও দেশের মানব সম্পদে পরিণত হতে পারে।