২০১৩ সালে এসএসসি’তে পাশ করার কিছুদিন পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তুহিন হোসাইন। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে মাত্র কিছুদিনের পড়াশোনায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল করে কবি নজরুল সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হয়। তুহিনের স্বপ্ন ছিলো দেশের সেবা করবে। সেই ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগদানের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। কিন্তু বিধিবাম! ট্রেনিংয়ে অংশ নেয়ার আগেই আবারো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে তুহিন। যখন কিছুটা স্বাভাবিক থাকে তখন সে সবকিছুই বলতে পারে। সবার সাথে হাসি খুশিতে মেতে ওঠে। কখনো আবার আবোল তাবোল বকে। কখনোবা নিরবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। পাবনা মানসিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলতে থাকে তার। সবশেষ, গেলো মাসেও একটি বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো। কোরবানি ঈদের আগে তাকে সেখান রিলিজ করানো হয়। নিয়মিত যথাযথ চিকিৎসা পেলে সুস্থ হতো পারে তুহিন। কিন্তু টাকার অভাবে ধারাবাহিক চিকিৎসার অভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেনা সে। মনের খেয়ালে গভীর রাতেও সুযোগ পেলেই সে এদিক সেদিক বাইরে বেরিয়ে পড়ে। বেশ কয়েকবার এভাবে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলো সে। সম্বিত ফিরে এলে আবার বাসায় চলে আসে। সম্প্রতি মায়ের সাথে বরিশালের মুলাদীতে মামা বাড়ি বেড়াতে যায় তুহিন। বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে বাসা থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ চলতে থাকে সে। হাটতে হাটতে একসময় পাশের ইউনিয়নে চলে যায়। কিন্তু এলাকার লোকজন চোর সন্দেহে বেধরক পেটায়। কিছু বলতে পারেনা সে। সবাই তাকে যখন চোর সাব্যস্ত করে নির্মমভাবে পেটাচ্ছিলো কারো মনে এতটুকু দয়া হয়নি। পিটিয়ে তার দু’পায়ের হাটু থেতলে দেয়া হয়। দু’পায়ের পাতায় পেটানো হয় নিষ্ঠুরতার সাথে। কিন্তু তুহিন জানেনা কোন অপরাধে তাকে মারা হচ্ছে। সারা শরীরে তার আঘাতের চিহ্ন। পায়ের নখ উপড়ে ফেলে পাষণ্ডরা। এমনভাবে পেটাচ্ছিলো যে একসময় তার পড়নের লুঙ্গিটাও ছিড়ে যায়। অবশেষে মারা যাওয়ার ভয়ে হয়তো ওরা তুহিনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। খবর পেয়ে ছুটে যায় তুহিনের দুঃখিনী মা। সন্তানের করুণ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তুহিনের মা এমন নির্মমতার বিচার চান। তার আকুতি যদি তার ছেলেকে না মেরে পুলিশে সোপর্দ করতো তাতে তার আক্ষেপ ছিলো না। তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় মুলাদী থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। তুহিন বলতে পেরেছে যে, তাকে ৮-৯ জন মিলে বেধড়ক পিটিয়েছে। তবে কি তুহিনের মানসিক ভারসাম্যহীনরা এতটাই অনিরাপদ! মনে পড়ে, গেলো বছর রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে রেনু বেগম নামে এক নারীকে কিভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। তুহিনও হয়তো তেমনই ভাগ্য বরণ করতে পারতো। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যেন তুহিনের মতো আর কাউকে এমন ভাগ্য বরণ করতে না হয়।
মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফয়েজ উদ্দিন জানান, তুহিনের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামে অভিযোগ দিয়েছে।আমরা তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা নিবো।