রাজশাহীর কৃষকেরা পার্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাট তন্তু জাতীয় উদ্ভিদ পাটগাছের ছাল থেকে পাটের আঁশ সংগ্রহ করা হয়। আমাদের দেশে পাটকে সোনালি আঁশও বলা হয়। কারণ পাটের আঁশের রঙ সোনালি এবং বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ২৫ শতাংশ আসে এ থেকে। পাট থেকে বিভিন্ন প্রকার পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হয়ে থাকে।
যেমন- সুতা, থলি, চট, দড়ি, সুতলি। পাট দ্বারা বিভিন্ন প্রকার পর্দা, কার্পেট, জায়নামাজ, ত্রিপল, গালিচা, গদি, শিঁকা, আসন, পাটখড়ি, কাগজ, পারটেক্স, হার্ডবোর্ড তৈরি হয়।
পাট উৎপাদনে বিশ্বে এশিয়া মহাদেশই প্রথম। বিশ্বে ৯৫ শতাংশ পাট এশিয়ায় জন্মে। পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। কিন্তু মেস্তা জাতীয় পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। পাট বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে।
পাটের জাত অনুযায়ী পাট উৎপাদনে জমি, চাষ পদ্ধতি ও সময় উপযোগী জৈব এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে দেশে তোষা ও দেশি দুই ধরনের পাট হয়ে থাকে। এছাড়া অল্প পরিমাণে কেনাফ এবং মেস্তা পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। তোষা পাট প্রধানত উঁচু জমিতে ভালো জন্মে, পক্ষান্তরে দেশি পাট নিচু, মধ্যম ও উঁচু সব প্রকার জমিতে জন্মাতে পারে। উর্বর জমি ছাড়াও যেসব জমিতে খরিফ মৌসুমে বোনা আউশ ধান এবং পাটের ফলন সন্তোষজনক হয় না সেসব জমিতেও কেনাফ এবং মেস্তা ভালো হয়। তবে মেস্তা বেলে মাটির জন্য অধিক উপযোগী এবং কেনাফ নিচু জমিতেও হতে পারে।
তোষা, দেশি, কেনাফ এবং মেস্তার মধ্যে তোষা পাটের আঁশ সবচেয়ে সুক্ষ্ম, মসৃণ এবং শক্ত হয়। পাট থেকে কাপড় ও পাটজাত দ্রব্য তৈরিতে তোষা পাটের উপযোগিতা অধিক বলে এ পাটের দামও অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই তোষা পাটের আবাদ বাংলাদেশে বাড়ছে। পৃথিবীতে ২৯ প্রকার পাটজাত উদ্ভাবিত হয়েছে। তার মধ্যে তোষাই সর্বোৎকৃষ্ট। এই পাট বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ আয় করেছে। এক সময়ে পাটের তৈরী পণ্য মানুষ সব থেকে বেশী ব্যবহার করলেও এখন প্লাস্টিক এসে এর ব্যবহার অনেক কমে কমে গেছে।
এরমধ্যে এ বছরের ভরা মৌসুমে আবার সবগুলো সরকারী পাটকল সরকার বন্ধ ঘোষনা করেছে। এরফলে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। রাজশাহীর পবা উপজেলার বাকশারা গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ, চৌবাড়িয়ার মকবুল, দারুশা এলাকার আকবর আলীসহ আরো অনেক কৃষক বলেন, এ অ লে সব থেকে ভাল পাট হলে ১০মন হারে হয়ে থাকে। আর বিঘাপতি খরচ হয় প্রায় ১৫-১৬হাজার টাকা। শুধু পাট কেটে পানিতে জাগ দিতেই এখন শ্রমিকরা নিচ্ছে বিঘাপতি ৬০০০টাকা। বর্তমানে বাজারে মনপ্রতি পাটের দাম ১৮০০-২০০০টাকা করে জানান তারা।
পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গেলে কৃষক কৃষাণীদের পাট নিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড করতে দেখা যায়। কেউ পাট কাটছেন, আবার কেউ পাট জাগ দিচ্ছেন, আবার কেউ জাগানো পাট ছেলা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। নারীরাও এ কাজে পিছিয়ে নেই । অনেক নারীকে পাট ছেলা, শুকানো ও পাটখড়ি শুকাতে দেখা যায়। পাট নিয়ে যত কর্মযজ্ঞ হচ্ছে, সে তুলনায় কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। তারা পাটরে দাম মন প্রতি ৩০০০হাজার টাকার উপরে রাখার আহবান জানান। পাট শিল্পকে বাঁচাতে হলে বন্ধকৃত পাটকল গুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে উৎপাদন শুরু এবং নতুন করে বেসরকবারী পর্যায়ে পাটকল স্থাপন করা জরুরী বলে উল্লেখ করেন কৃষকরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায় এবারে রাজশাহীতে ১৪৭৯৬ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে মতিহার ও বোয়ালিয়া থানাতে ২ হেক্টর করে, পবা উপজেলায় ১৭৫০ হেক্টর, মোহনপুরে ৫২ হেক্টর, বাগমারা উপজেলাতে ১৯২০ হেক্টর, দূর্গাপুরে ১৬১০ হেক্টর, পুঠিয়াতে ৩৩১৫ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৮১০ হেক্টর ও চারঘাটে ১৬৩৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। তানোর উপজেলায় কোন পাটের চাষ হয়নি বলে জানান তারা।