জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চলছে ঝিনাই নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। অনুমোদিত কোনো বালুমহাল নেই। নদী থেকে বালু উত্তোলনে নেই প্রশাসনের অনুমতিও। তারপরেও রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মাসের পর মাস উপজেলার ঝিনাই নদীর একাধিক স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি বালু খেকো সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট চক্র। যার ফলে তারাকান্দি- ভূয়াপুর মহাসড়কটি হুমকির মুখে
পতিত হচ্ছে দিন দিন। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে
অনেকেই হচ্ছেন ভূমিহীন। প্রশাসনের নাকের ডগায় কয়েকটি সংঘবদ্ধদল অবৈধভাবে
বালু উত্তোলন করছে। এ বালু বিক্রি করে কেউ কেউ রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে।
এ কারণে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় হুমকির মুখে পড়ছে নদী তীরবর্তী ঘর-বাড়ি
ও আবাদী জমির মালিকরা। বালু উত্তোলনের প্রত্যেকটি পয়ন্টেই নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয়
রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এদের দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এতে প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই এ ব্যাপারে সরকারের ভূমি বিভাগসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তা ব্যক্তিদের নজরদারীর পাশাপাশি যথাযথ ভূমিকা রাখা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এলাকা ঘুরে দেখা যায ভাটারা ইউনিয়ন কামরাবাদ ইউনিয়নের রেলিব্রীজ, কামরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ঝিনাই নদী ও ডোয়াইল, সাতপোয়া পোগলদিঘা, পিংনা, আওনা ইউনিয়নের যমুনা নদী ও ঝিনাই নদী থেকে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। নদীর তল দেশের ভূমি কথিত মালিকানা দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে নামমাত্র অর্থে অথবা পেশি শক্তির অর্থের বিনিময়ে বালু উত্তোলন করে। কয়েক মাস ধরে বিশাল স্থান নিয়ে জাগা এই চরে আওনা ইউনিয়নের স্থল গ্রামের সাইফুল ইসলাম, কুমার পাড়া গ্রামের নয়ন, আব্দুল জলিল, আলতাব, ইকবাল, বকুল, আনিছুর রহমান আনিছ, আওনা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হাফিজুর রহমান ও কাওয়ামারা গ্রামের হাফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র কাওয়ামারা এলাকার যমুনা নদীর ঘাট এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। প্রতিদিন ওই সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের ৪৫-৫০ জন শ্রমিক নদীর চর কেটে ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে ট্রাকে বালু ও মাটি তুলে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। উত্তোলিত বালুগুলো বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। আবার
তারা সেই মাটি বিক্রি করছে বাড়ির ভিটা, পুকুর, ডোবা ভরাটের জন্য। নদীর চর থেকে প্রতি ট্রাক বালুর দাম নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন পয়ন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ধুম পড়েছে। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে গত বছর প্রায় কয়েক শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়।
ঝুকিঁপূর্ন এলাকা হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে প্রকাশ্যে এ ইউনিয়নে নদীর চর কেটে অবাধে বালু বিক্রি করা হচ্ছে এনিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। রাস্তার পাশে আবাদি জমি নামমাত্র মূল্যে ভাড়া নিয়ে বালু ভরাট করে কতিপয় ব্যবসায়ী বালু বিক্রি এবং পরিবহন এর জন্য ট্রাক-ট্রাষ্টর ব্যবহার করায় রাস্তা গুলো ভেঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে এমনকি এসব যানবাহন গুলো বেপরোয়া ভাবে চলাচল করায় এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনাও বেড়েছে। তারাকান্দি-ভূয়াপুর মহা সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে বালু নিয়ে যাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে তারাকান্দি-ভূয়াপুর মহাসড়কটি। যেখানে প্রতিবছর বন্যার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশলী বিভাগের সদস্যগণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক যমুনা নদীর ভাঙন রক্ষার কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকে। ইতিপূর্বে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও অদৃশ্য কারণে পুনরায় ব্যাপকভাবে জমজমাট ব্যবসা শুরু করেছে। এখানে উল্লেখ্য থাকে যে, বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে পিংনা ইউনিয়নে দুইজন খুন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে সে হত্যাকে কেন্দ্র বিভিন্ন আন্দোলন, রাস্তা অবরোধ, পুলিশ ও জনতা সংঘর্ষ, গুলি, টিয়ারসেল নিক্ষেপ, প্রায় অর্ধ শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। তবুও বালুর ব্যবসা জমজমাটভাবে চলছে দেখার ও বলার যেন কেউ নেই। এ ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে সরিষাবাড়ীবাসী।