বাংলাদেশের একমাত্র লাভজনক কয়লাখনি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। এ খনির উন্নতমানের কয়লা দিয়েই পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এর মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। সমৃদ্ধ হয় জাতীয় অর্থনীতি। জাতীয় অর্থনীতি সচল রাখার কারিগর তথা শ্রমিকরা ভালো নেই। একের পর এক কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া অমানবিক নিয়মনীতিতে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। করোনা কালে দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকার পরে কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ১২০০ শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ৫০০জন শ্রমিককে নিয়োগ দেয় খনি কর্তৃপক্ষ। সেখানে চীনা কর্মকর্তা কর্মচারীদের একক আধিপত্য বিরাজ করে। নিত্য নতুন নিয়মের চাপে হতাশা ও ক্ষোভে ফুঁসছে খনি শ্রমিকরা। সম্প্রতি সে ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দেয় চীনা কর্তৃপক্ষের হঠকারী আচরণ। শ্রমিকদের নির্ধারিত মসজিদে বৃহস্পতিবার (৭জানুয়ারি) রাত ৮ ঘটিকায় এশার নামাজরত ৪/৫ শ্রমিককে মারধর করেন একজন চীনা কর্মকর্তা। মাইনিং সেকশনের শ্রমিক বিপ্লব (৩০) কে লাথি মেরে ফেলেও দেন। করোনার অযুহাতে মসজিদে নামাজ আদায়ে প্রায়ই বিঘ্ন ঘটায় চীনা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার এশার নামাজ আদায় করতে গেলে নামাজরত অবস্থায় তাদের লাথি মারেন ও লাঞ্ছিত করেন ঐ চীনা কর্মকর্তা। এতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে শ্রমিকরা ধাওয়া করেন ঐ চীনা কর্মকর্তাকে। মুহুর্তে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন খনি শ্রমিকরা। ভাংচুর করা হয় ঐ কর্মকর্তার মোটরসাইকেল। মুসলিম দেশে নামাজরত অবস্থায় লাথি মারার প্রতিবাদে ঐ কর্মকর্তার বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কয়লা উত্তোলন বন্ধের ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক বলেন, স্ত্রী সন্তানের মায়া মমতা ত্যাগ করে দীর্ঘদিন বন্দি থেকে শ্রম দিচ্ছি। অথচ ঠুনকো অজুহাতে আমাদের রক্তঘামা বেতন কর্তন করে চীনারা। ঘরের মধ্যে মাস্ক না পড়া, ঘরের মধ্যে ধুমপান করলে, খনির অভ্যন্তরের দোকানে খরচ করার পর বাড়তি টাকা ফেরত নিলে, বাইরে থেকে খরচ করলে ইত্যাদি অজুহাতে ৩শ, ৫শ, ১হাজার, ১২শ এমনকি ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর্তন করা হয়। সর্বোপরি মসজিদে নামাজ পড়তেও বিঘ্ন ঘটায়। যারা নামাজ পড়তে যায় ঐ চীনা কর্মকর্তা তাদের ছবি তুলে রাখে। সবশেষে নামাজরত অবস্থায় মারধর করা হয়েছে। অথচ তখন ডিউটিতে ছিলেন না শ্রমিকরা। চীনা কর্তৃপক্ষের আচরণে মনে হচ্ছে, আমরা চীন দেশে বা ইসরাইলে বসবাস করছি। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে খনি কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে গভীর রাত অবধি আলোচনা করেও কোন মিমাংসা সম্ভব হয়নি। আগামী সাত দিনের মধ্যে উক্ত চীনা কর্মকর্তাকে খনি থেকে বহিষ্কার ও উপযুক্ত বিচারের দাবি জানায় শ্রমিকরা। পাশাপাশি কষ্টার্জিত বেতন কর্তন, দোকানে খরচের পর বাড়তি টাকা ফেরত নেওয়ার অধিকারসহ বিভিন্ন দাবি জানায়। অন্যথায়, তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণাও দেয়া হয়। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খনির ব্যবস্থপনা পরিচালক(এমডি) কামরুজ্জামান বলেন, রাতে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছিল। সকাল থেকে আবারও শ্রমিকরা মিছিল করতে থাকে। অবশেষে আবারও দুপুরে আলোচনায় বসে বিষয়টি সমাধান করা হয়। শ্রমিকরা দুপুর ২টা থেকে কাজে যোগ দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে ধর্মীয় বিঘ্ন ঘটতে পারে। যদি তাড়াতাড়ি এটা নজর না দেয়া হয় তাহলে বিষয়টি অনেক দূর গড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের।